নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকমঃ সাদিয়া আর হাফিজ। দু’জনেই সেহাচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। গতবছর তারা যখন চতুর্থ শ্রেণীতে পড়তো তখন তাদের ক্লাস হতো স্কুলের পুরনো জরাজীর্ন ভবনে। প্রায়ই সে ভবনের আস্তর খসে পড়তো। কখনো সে আস্তরের টুকরো হতো বেশ বড়। কারো মাথায় পড়ে আহত হয়ে যায় কিনা এ আতঙ্কে থাকতো সাদিয়া, হাফিজসহ স্কুলের সব ছাত্র-ছাত্রী। তার উপরে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী এত বেশি ছিলো যে একদম গাদাগাদি করে বসতে হতো তাদের। অনেকে পেছনে দাড়িয়ে ক্লাস করতো।
কিন্তু এখন আর আতঙ্ক নিয়ে ক্লাস করতে হয়না তাদের। এ বছর তাদের পুরো স্কুলটি চলে এসেছে পুরনো ভবনের পাশে নির্মাণ করা ছয়তলা নতুন ভবনে। গাদাগাদি করে বসতেও হয়না। ছয়তলা স্কুলভবনে তাদের স্কুলের প্রায় দুই হাজার সাতশ ছাত্র-ছাত্রীর সবার ভালোই জায়গা হয়ে গেছে। আগের ভবনে টয়লেটেরও সমস্যা ছিলো। নতুন ভবনে সে সমস্যাও নেই – জানালেন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা তাসলিমা আক্তার। বললেন, আশে পাশের গার্মেন্ট শিল্পাঞ্চলের মাঝে এ স্কুল। তাই স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যাও বিশাল। সাধারনত অন্য স্কুলে চারশ থেকে পাচশ ছাত্র-ছাত্রী থাকে। কিন্তু এ স্কুলে বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা সাতাশ শত। চার বছর আগে ছিলো সাড়ে তিন হাজার। কয়েকটি গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ হওয়ায় ও কয়েকটি কারখানা অন্য জায়গায় শিফট হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। তিনি বলেন, ছাত্র-ছাত্রীর এ বিশাল সংখ্যা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নজরে আসলে তারা বিষয়টি সহানূভূতির সাথে বিবেচনা করে এ স্কুলে বিশেষ বরাদ্দ দেয়। দুই কোটি আটাত্তর লাখ উনষাট হাজার টাকা ব্যায়ে এলজিইডি ২০১৬ সালের শেষদিকে এর নির্মাণ কাজ শেষ করে। ২০১৭ সালের মাঝামাঝিতে আমরা এ ভবনে চলে আসি। ৬ তলা ভবনে ২২ টি ক্লাস রুম, দুইটি অফিস কক্ষ, বারোটি টয়লেট রয়েছে।
সেহারচরের মতো ছয়তলা ভবন না হলেও হাজীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য সরকার নির্মাণ করে দিয়েছে দুই তলা একটি নতুন ভবন। এ স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী প্রায় সাড়ে আটশ। আগে দুইটি পুরনো ভবনে চলতো স্কুলের কাজ। এর মধ্যে একটি ভবন ছিলো ১৯৭০ এর। বৃষ্টি হলেই এই ভবনটি পানিতে তলিয়ে যেতো। সরকারের নতুন তৈরী করা স্কুল ভবনটি বেশ উঁচু করে নির্মাণ করা। যাতে জলাবদ্ধতা হলে পানি ক্লাসরুমে না ঢুকতে পারে – জানালেন স্কুলটির প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা ব্যায় বেশি। যা শ্রমিকদের পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব না। এ শ্রমিকদের সন্তানদের আশ্রয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলি। তাই শিল্পশহর নারায়ণগঞ্জের অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা ধারন ক্ষমতার বেশি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বিগুন বা তিনগুন। এ সমস্যা সমাধানে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সহযোগিতায় বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে সরকার একটি তালিকা তৈরী করে। এর প্রেক্ষিতে তৃতীয় প্রাইমারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (পিইডিপি-৩) এর আওতায় সরকার আটত্রিশটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন সরকারি স্কুল ভবন করার উদ্যোগ নেয়। এর কোনোটা দুই তলা, কোনোটা তিন তলা বা চারতলা। সেহারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুলটি একমাত্র ছয় তলা।
এলজিইডি’র নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী স্বপন পাল জানান, এসব ভবন তৈরীতে মোট ব্যায় হচ্ছে চৌত্রিশ কোটি আশি লাখ টাকা। আটত্রিশটি ভবনের মধ্যে ত্রিশটির কাজ শেষ। এগুলি এখন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে। কোন কোনটিতে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। বাকিগুলির একটির কাজ পঁচাশিভাগ, একটির চল্লিশ ভাগ ও বাকিগুলির কাজ দশ থেকে পঁচিশভাগ শেষ হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট সংখ্যা ৫৪৬ টি। নারায়ণগঞ্জের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির বিশেষ করে সিটি কর্পোরেশন এলাকার অনেকগুলির ধারক্ষমতার তুলনায় ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বেশি বলে জানালেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অহিন্দ্র কুমার মন্ডল। ফলে শিফটিং করে ক্লাস নিতে হচ্ছে। নতুন ভবনগুলির জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, নতুন আটত্রিশটি ভবন তৈরী হওয়ায় যেগুলিতে ছাত্র-ছাত্রী বেশি বা ভবন জরাজীর্ন হয়ে গেছে সেগুলিতে নতুন ভবনের চাহিদা তৈরী হয়েছে। আমরা চাইবো নারায়ণগঞ্জের প্রাথমিক স্কুলগুলির ভবন নির্মাণের জন্য সরকারি আরো বরাদ্দ আসুক।#